আসসালামু আলাইকুম,আজকে আমরা জানবো আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।
আপেল সিডার ভিনের নিয়ে আমাদের সবারই কম বেশি ধারণা রয়েছে।আপেল সিডার ভিনেগার বা সিডার ভিনেগার হল ভেজানো আপেলের রস থেকে তৈরি ভিনেগার এবং এইটি সালাদ ড্রেসিংস, মেরিনেডস, ভিনেগারাইটস, ফুড প্রিজারভেটিভস এবং সসগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এটি আপেল পিষে তৈরি করা হয়, তারপরে রস বার করা হয়।
আপেল সিডার ভিনেগারের পুষ্টিগুণঃ
১।আপেল সিডার ভিনেগার ৯৪% পানি,
২।১% কার্বোহাইড্রেট
৩। কোনও ফ্যাট বা প্রোটিন নেই।
আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতাঃ
১।রান্নার কাজেঃ
রান্নায় ব্যবহৃত হয় আপেল সিডার ভিনেগার।মাংসের স্টেককে আরো সুস্বাদু করতে এটি জনপ্রিয় উপাদান। এটি মাংসে চমৎকার মিষ্টি এবং টক স্বাদ তৈরি করে।
২।স্বাস্থ্যের জন্যঃ
আপেল সিডার ভিনিগারের ক্ষেত্রে আপেলের রসে ইস্ট ও ব্যাকটিরিয়া মিশিয়ে তাকে প্রস্তুত করা হয়। স্বাস্থ্যকর নানা কারণে এই ভিনিগারকে ডায়েটে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরাও।ভিনেগার ব্যাকটিরিয়া মারতে সক্ষম বলে ডায়রিয়া সমস্যায় বিশেষ উপকারী। এক-দু’ চা চামচ ভিনেগার এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে উপকার মিলবে।
৩।ডায়বেটিস রোগীর জন্যঃ
ডায়াবেটিসের সমস্যায় এই ভিনেগার উপকারী। মূলত ইনসুলিন তৈরি করতে না পারা বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্টের কারণেই রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে। খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ আপেল সিডার মিশিয়ে খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪।গলাব্যথার জন্যঃ
গলাব্যথার ক্ষেত্রে আধ কাপ ঈষদুষ্ণ পানিতে দু’চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ও মধু মিশিয়ে গার্গল করলে আরাম পাবেন অনেকটা।
৫।হজমের সমস্যার দূর করার জন্যঃ
হজমের সমস্যাতে মেটাতেও এই ভিনেগার খুব কার্যকর। গরম পানিতে এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগারে বদহজম থেকে মুক্তি মেলে সহজেই।
৬।চুলের যত্নে
শ্যাম্পু করার পর চুল ধুয়ে নিন আপেল সিডার ভিনেগার মেশানো পানি দিয়ে। কন্ডিশনারের সমান উপকার পাবেন। চুল নরম হবে, ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির জন্য খুশকির সমস্যাও কমবে দ্রুত।
৭। কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেঃ
খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে ও ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে আপেল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারী। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
৮।ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার জন্যঃ
নখের ছত্রাক, আঁচিল, উকুন, কানের ইনফেকশন উপশম করতেও এ ভিনেগার ব্যবহার করা যায়। কয়েক হাজার বছর আগে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার জন্য ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।
৯।খাবার সংরক্ষণ করার জন্য
খাবার সংরক্ষণ করতেও ব্যবহার করা হয় ভিনেগার। এতে খাবারে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মায় না। প্রাকৃতিকভাবে খাবার সংরক্ষণ করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন আপেল সিডার ভিনেগার।
১০।ব্রণ দূর করার জন্যঃ
ব্রণসহ ত্বকে ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে এ ভিনেগার খুব কাজের। (আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা ও অপকারিতা )
১১।শেভিং লোশন হিসেবেঃ
ছেলেরা এটিকে আফটার শেভ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সমপরিমাণ পানি এবং অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার নিয়ে বোতলে ভরে রাখুন। শেভ করার পর দিন।
১২।ত্বকের যত্নেঃ
প্রতিদিন ত্বকে একে ব্যবহার করলে ত্বকে কোন মরা কোষ থাকে না, ত্বক উজ্জ্বল হয়, বলিরেখা দূর করে, স্কিনের PH-এর সমতা রক্ষা করে, লোমকূপ ছোট করে, মুখে ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ কমে যায়।
১৩।ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেঃ
আপেল সিডার ভিনেগার ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়- বিভিন্ন গবেষণায় প্রায়শই এমন দাবি করা হয়ে থাকে।
১৪।কিট পতঙ্গ ধমনেেঃ
আপেল সিডার ভিনেগার ঘরের কিট পতঙ্গ মারার ফাঁদ হিসেবে খুব সহজে ব্যবহার করা যায়। একটি কাপে আপেল সিডার ভিনেগার ঢালুন এবং তাতে কয়েক ফোটা বাসন পরিস্কার করার সাবান মিশিয়ে দিন। এরপর এটাতে পোকা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মারা যাবে।
১৫।ফলমূল ফরমালিন মুক্ত করতেঃ
কিনে আনা ফলমূলে কীটনাশক পদার্থ থাকতে পারে। এছাড়া ফরমালিনের মতো বিষাক্ত পদার্থও থাকতে পারে। এজন্য অনেকে এসব ফলমূল বা শাক-সবজি বিষমুক্ত করতে আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে ধৌত করে।
১৬।খুশকি দূর করতেঃ
হালকা পানি ও ভিনেগার মিশিয়ে তা দিয়ে মাথা মাসাজ করলে খুশকি কমার সম্ভাবণা রয়েছে।
১৭।মশা মাছি দূর করার জন্যঃ
দুইভাগের একভাগে পানি এবং এক ভাগে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে সারা ঘরে স্প্রে করলে মশা মাছি দূরে থাকবে।
১৯।গলা পরিষ্কার করার জন্যঃ
গলার স্বর ভেঙ্গে গেলে তা ঠিক করতে আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি।
আপেল সিডার ভিনেগারের অপকারিতাঃ
১।বুকজ্বালা ও এসিডিটির সমস্যা তৈরি করে:
খুব বেশি পরিমাণ ভিনেগার খেলে গলা জ্বলতে পারে। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার যেহেতু ডিটক্সিফায়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় তাই কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বুক জ্বালাপোড়া করা, ডায়রিয়া বা বদ হজমের সমস্যা হতে পারে।
২।দাঁতের এনামেলকে দুর্বল করে দেয়
যেহেতু অ্যাপল সাইডার ভিনেগারে উচ্চমাত্রার এসিডিক উপাদান থাকে সেহেতু এটি খুব ঘন ঘন ব্যবহার করলে দাঁতের এনামেলকে দুর্বল করে দিতে পারে
৩।খাবার হজমে অস্বাভাবিকতাঃ
পানিতে না মিশিয়ে সরাসরি ভিনেগার খাওয়া কখনোই উচিত নয়। এ ভিনেগার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে, এটা ঠিক।
কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে খাবার হজম হতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে। ফলে দেখা দিতে পারে ক্ষুধামন্দা।
৪।ঔষধের মিথস্ক্রিয়া
ডায়াবেটিস ও অন্য বেশকিছু রোগের ওষুধের সঙ্গে ভিনেগার খেলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩। রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা এবং হাড়ের ঘনত্ব কমায়:
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার অতিরিক্ত সেবন করলে রক্তের পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায় যাকে হাইপোক্যালেমিয়া বলে এবং হাড়ের ঘনত্ব ও কমে যায়।
৬।অন্যান্য সমস্যাঃ
এছাড়াও কারো কারো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অ্যাপল সাইডার ভিনেগার গ্রহণের ফলে বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, চুলকানি, মাড়িতে জ্বলুনি ও পেটেব্যথার মত সমস্যাগুলো হতে পারে।
এছাড়াও বিরল ক্ষেত্রে মুখ ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ও ত্বক লাল হয়ে যাওয়া বা র্যাশের সমস্যা হতে পারে।
জেনে রাখা ভালো,
তবে দিনে বড় চামচের দু’চামচ বেশি আপেল সিডার খাবেন না, খেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন। এ ছাড়া যখনই এই ভিনিগার খাবেন, তা অবশ্যই পানির সঙ্গে মিশিয়ে পাতলা করে ফেলতে হবে।
আশা করি আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জেনে সবার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ঘটাতে সুবিধা হবে।